
লোকসানের পাহাড় বিপিডিবি
বিদ্যুৎ চুক্তি খতিয়ে দেখছে সরকার
- আপলোড সময় : ১৭-১০-২০২৪ ১২:১২:৩৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-১০-২০২৪ ১২:১২:৩৪ পূর্বাহ্ন


* সব বিদ্যুৎকেন্দ্রকেই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতসংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেয়া হয়
* ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেয়া ছোট-বড় ওসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো দায়মুক্তি আইন পাস করে বিচারের পথ রুদ্ধ রাখা হয়
লোকসানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিবিডি)। বিগত তিন অর্থবছরে সংস্থাটি প্রায় এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। সরকার ঘাটতি পূরণে ওই সময়ে প্রায় এক লাখ সাত হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা পুরাপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জ¦ালানিসংকটে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণেও ওই উৎপাদন সক্ষমতা এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্তু উৎপাদন না হলেও চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিতে হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ। ফলে বেড়েই চলেছে বিপিডিবির লোকসানের পরিমাণ। ভর্তুকি দিয়ে তা পূরণ করা হচ্ছে। আর ভর্তুকির চাপ কমাতে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। বিপিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিপিডিবির ৪৭ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা (প্রাক্কলিত) লোকসান দাঁড়িয়েছে। ওই সময় বিপিডিবিকে ৩৮ হাজার ২৮৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। বিগত তিন ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিপিডিবি লোকসান হয় ৫১ হাজার ৩০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর বিপিডিবির লোকসান হয়েছিল ৩২ হাজার ৮৯১ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং ভর্তুকি দেয়া হয় ২৯ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াট। তবে দৈনিক গড়ে উৎপাদন হয় ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও জ¦ালানির ব্যবহার বাড়ছে। নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। তাতে বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণও। তাছাড়া গ্যাসের ব্যবহার কমে কয়লা ও জ¦ালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। তাতে বিপিডিবির ব্যয় বেড়েছে। এমন অবস্থায় কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এবং বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়েও লোকসান সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কারণ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় ২০ টাকারও বেশি। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শুধু রাতের পিক আওয়ারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত সরকার ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ‘বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান)’ নামে একটি আইন করে। পরে তিন দফায় ওই আইনের মেয়াদ ১৪ বছর বাড়ানো হয়। গত ১৪ বছরে বেসরকারি খাতে শতাধিকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সব বিদ্যুৎকেন্দ্রকেই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতসংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেয়া ছোট-বড় ওসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উল্টো দায়মুক্তি আইন পাস করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির বিশেষ বিধান আইনের অধীনে চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে। বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ বিধানের আওতায় করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের আদানি, বাংলাদেশের সামিটসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সরবরাহ-সংক্রান্ত চুক্তি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেজন্য সরকার গঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি ওসব বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কিত সব নথিপত্র তলব করেছে। এদিকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ জন্য বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির দ্বিতীয় সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরসংশ্লিষ্ট নথি ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সামিট গ্রুপের মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট ও কড্ডা ৩০০ মেগাওয়াট, প্যারামাউন্ট গ্রুপের বাঘাবাড়ী ২০০ মেগাওয়াট, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের পটুয়াখালীর ১৫০ মেগাওয়াট, ওরিয়ন গ্রুপের মোংলা ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, ইয়ুথ গ্রুপের মিডল্যান্ড পাওয়ার কম্পানির আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর ডরিন পাওয়ারের মানিকগঞ্জ ১৬২ মেগাওয়াট, বেক্সিমকো গ্রুপের সুন্দরগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, ইন্ট্রাকো গ্রুপের লালমনিরহাট ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, এইচডিএফসি সিনপাওয়ারের সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভারতের আদানি গ্রুপের ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ